রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
……….আওরঙ্গজেব কামাল, কালের খবর :……..
অনলাইন সাংবাদিকতা মানেই নানাবিধ ঝুকির মধ্যে থাকা। অনলাইন জগতে এখন সত্যের বস্তুনিষ্ঠতা হামলার সম্মুখীন, একইভাবে সাংবাদিকরাও এ বিষয়ে সবসময় নানাবিধ প্রতিযোগীতা করে চলতে হচ্ছে। তাই রিপোর্টারদের এখন নিজেদের ডিজিটাল নিরাপত্তা বা নানাবিধ আইনের সাথে যুদ্ধ করে সাংবাদিকতা করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরতা। বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে পিছনে টেনে নিচ্ছে। কারন নামমাত্র অনলাইন পোর্টাল চালু করে ভুয়া নিউজ দেবার প্রবণতা বেশি। মূলধারার গুলো ব্যতিক্রম। আর নিউজ প্রকাশ করে তা সরিয়ে নেবার ঘটনাও আছে অনেক। ফলে মানুসের বিশ্বাসের জায়গাটি পোক্ত হয়নি। পেশাগত সাংবাদিকতার সমন্বয়ের অভাব। একদিকে নতুনরা এই পেশায় আসছে কিন্ত সাংবাদিকতা চর্চার বা শেখার সুযোগ পাচ্ছেনা তরুণরা। পত্রিকাগুলোতে অভিজ্ঞ ও দেশবরেণ্য সাংবাদিকদের সাথে সরাসরি কাজ করে সাংবাদিকতাকে মহান পেশা হিসেবে দেখবার যে সুযোগ রয়েছে তা অনলাইন বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোতে অনুপস্থিত। আবার যারা পেশাগতভাবে সাংবাদিক তারা প্রযুক্তিতে যথেষ্ট দখল না থাকায় অনলাইনের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাই সাংবাদিকতা ও অনলাইনের বিশেষত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ব্যপারে নলেজ বাড়াতে হবে। আর যাদের আইটি নলেজ রয়েছে তাদের সাংবাদিকতা পেশাকে বুঝতে হবে। এই দুই বিষেয়ের সমন্বয় ছাড়া অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিয়ে বেশিদুরে অগ্রসর হওয়া সহজ হবে না। আমাদেরদেশে পেশাদার অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো সাংবাদিকের নিয়ন্ত্রণে নেই, ব্যতিক্রম কয়েকটি ছাড়া। এখানে সেই পুরনো বিতর্ক আবারও আসছে যে সাংবাদিকদের পুঁজি নেই মিডিয়া করার। আর যাদের পুঁজি আছে তারা সাংবাদিক নয়। ফলে অনেক বড় বড় কোম্পানী কিছু টাকা ব্যয় করে একটি অনলাইন পত্রিকা শুরু করছে। কিন্ত কোন পরিকল্পনা ও পেশাদার সাংবাদিকতা চর্চার অভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়ছে। অবশ্যই অনলাইন সাংবাদিকদের সকল বিষয়ে প্রতিটি সাংবাদিকের জ্ঞান থাকা অতি জরুরি। বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা পেশায় সবচেয়ে আধিপত্য বিস্তারকারী প্রযুক্তি হলো ইন্টারনেট। এটি তথ্য ও যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের সকল ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে।যার সুফল এখন সারা বিশ্বব্যাপী ভোগ করছে। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত ‘অনলাইন’ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করে নবদিগন্তের সূচনা করে । ১৯৯৬ এর মাঝামাঝি বাংলাদেশ যখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় তখন থেকে ঢাকার দু’একটি জাতীয় দৈনিক এই ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে। ১৯৯৭
সালের শেষদিকে কয়েকটি পত্রিকা তাদের ওয়েবসাইট সংরণের প্রচলন ঘটায়। ১৯৯৮/৯৯ থেকে ব্যাপকহারে সংবাদপত্রগুলো তাদের ওয়েবসাইট সংরণ চালু করে। এই ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অনলাইন সাংবাদিকতার একটি নতুন ধারা চালু হয়েছে। অনলাইন সংবাদপত্রকে ওয়েব সংবাদপত্র বলে। এ সংবাদপত্র ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তথা ইন্টারনেটে উপস্থাপন করা হয়। সেটা কোন প্রিন্ট, অডিও কিংবা ভিজুয়াল সংরণের ওয়েব সাইট সংরণ হতে পারে,আবার সম্পুর্ণ পৃথকভাবে একটি সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব সাইটও হতে পারে। প্রচলিত সাংবাদিকতায় বাস্তব ও তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনা প্রবাহের বিবরণ ইত্যাদি উপস্থাপন করা হয় অন্তত তিনটি মাধ্যমে – সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে। দীর্ঘ পথপরিμমায় সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম আমাদের দেশে একটি ভিত্তিভ‚মি নির্মাণ করেছে। সংবাদমাধ্যম এখন আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তিত একটি মাধ্যম। এক সময় বলা হতো সাংবাদিকরা জন্ম নেয়। কিন্তু কালের আবর্তে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের ক্সতরীও করা যায়। এক সময় সাংবাদিকতার জন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন অনুভূত হতো না। এসব ধারণা এখন পাল্টে গেছে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ গবেষণা বা গণমাধ্যম গবেষণার বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকতাকে নিয়ে আসা হয়েছে। একজন অনলাইন সাংবাদিক হিসেবে প্রায়শই কিছু বিরক্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমরা অধিকঅংশ সময় অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। অনেক সময় ভূয়া সাংবাদিকে পরিনত হই। অনেকেই এই সাংবাদিকতা মানতে চায় না। অথচ অনলাইন সাংবাদকিতা গত কয়কেবছর ধরে মূলধারা ও বকিল্পধারার সংবাদ মাধ্যম গুলোর জন্য একটি বশ্বিাসযোগ্য তথ্য প্রবাহরে সূত্র হসিবেে ববিচেতি হচ্ছ। কেনেনা, এই অনলাইন সাংবাদকিরা যে কোন ঘটনার খবর দ্রুত প্রকাশ করতে পারনে। অনলাইন সাংবাদকিদরে খবর ছাড়াও বভিন্নি প্রযুক্তগিত জ্ঞান রাখতে হয়। খবর দিতে হয় বেশি বেশি। করতে হয় অতরিক্তি পরশ্রিম।অথচ ভূয়া সাংবাদকি নামে তরিষ্কার সবসময় শুনতে হয়। আমরা অনলাইন হয়রানি বলতে বুঝি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন কাউকে তীব্র, ব্যাপক ও ক্ষতিকর ভাষায় আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানায়, তাকে অনলাইন হয়রানি বলা হয়। এটি একটি সার্বিক পরিভাষা, যার মধ্যে আছে ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য, যৌন হয়রানি, হ্যাকিং ও ডক্সিং, যার অর্থ কারো ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকরা এই ধরনের হামলার শিকার হন অনেক বেশি। ইউনেস্কো ও ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইন হয়রানি “নারী সাংবাদিকদের জন্য নতুন যুদ্ধক্ষেত্র।” বিশ্বজুড়ে ৭০০-র বেশি নারী সাংবাদিকের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নারীই কোনো না কোনো ধরনের অনলাইন সহিংসতার মুখে পড়েছেন। অনলাইন হয়রানি একটি সার্বিক পরিভাষা, যার মধ্যে আছে: ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য, যৌন হয়রানি, হ্যাকিং ও ডক্সিং। তারা যৌন নির্যাতন, শারীরিক সহিংসতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত হামলার হুমকি পেয়েছেন। হয়রানিমূলক ও অযাচিত বার্তা পেয়েছেন। তাদের ছবি বিকৃত করে যৌন ইঙ্গিত দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যক্তি-মর্যাদা ও পেশাগত বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে চাওয়া হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া নারী সাংবাদিকদের পাঁচভাগের দুইভাগই বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে পরিকল্পিত ভুয়া তথ্য প্রচারণার অংশ হিসেবে। তেমনি পুরুষ সাংবাদিক সবসময় পরিনত হয় ভূয়া সাংবাদিকে । অথচ সকলে অনলাইনের সংবাদের জন্য সবসময় অপেক্ষা করেন। ছাড়াও কোর্টের বিচার সংক্রন্ত সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে সব মিলিয়ে অনলাই সাংবাদিকতা মানেই নিজেকে বিপদের মধ্যে ফেলা । বর্তমানে অনলাইনের কারনে মানুষের অধিকার, নারী স্বাধীনতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, সন্ত্রাস দমন, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধ্যান ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্র যখন অনলাইনে মোড়ানো অচ্ছে তখন অনলাইন সাংবাদিকদের ছোট করে দেখার কিছু নেই। সাংবাদিকতায় এখন প্রকৌশল বা তথ্যপ্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। আধুনিক এই যুগে পৃথিবীর যে প্রান্তেই ঘটনা ঘটুক না কেন, তা মুহূর্তের মধ্যে আমাদের নাগালে চলে আসছে। সেই খবর তখনই পাঠকের জন্য পরিবেশন করা হচ্ছে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে অনলাইন সাংবাদিকরা। অবশ্যই তাদের গুরুত্ব একেবারে কম নয়।অনলাইন সাংবাদিকতা আসলে পাঠককে সময়ের সঙ্গে চলতে সাহায্য করে। যে কোনো সময়ে যে কোনো খবর অনলাইন পত্রিকা সবার আগে প্রকাশ করতে পারে। সে কারণে অনলাইন সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক। এই সাংবাদিকতা চতুর্মাত্রিক। অনলাইন সাংবাদিকতায় সময় যেহেতু মূল বিবেচ্য বিষয়, সেকারণে অনলাইন সাংবাদিকদের চাপের মধ্যেই কাজ করতে হয়। ফলে আমাদের উচত সবসময় অনলাইন সাংবাদিকদের নানাবিধ সুবিধা দেওয়া।বাংলাদেশে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা হাজার হাজার। পেশাদারিত্ব কিংবা মোটামুটি পেশাদারিত্ব আছে এমন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা হাতে গোনা। আস্থা তৈরি করা এই পোর্টালগুলো বাদে বাকিগুলো খবর কপি করে হুবহু বা কিছুটা পরিবর্তন করে প্রকাশ করে। অবশ্যই এ থেকে আমাদের বের হতে হবে। যাই হোক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিয়ে অনলাইন সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের বিষয়ে যথেষ্ট সর্তক থাকতে হবে। অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিককে এই নীতিমালা মেনে চলতে হবে। সচেতন হতে হবে তার দায়িত্ববোধ সম্পর্কে। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। একটি অনলাইন পত্রিকার চালকের আসনে যারা থাকবেন, তাদের আসলে সময়ের সঙ্গে চলতে হবে। পাঠকের চাহিদার কথা বুঝতে হবে, প্রযুক্তি বুঝতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা তাদের খবরের মানুষ হতে হবে। তাহলে অনলাই সাংবাদিকতা মুল ধারার সাংবাদিকতায় পরিনত হবে।
আওরঙ্গজেব কামাল
লেখক ও গবেষক এবং
সভাপতি-ঢাকা প্রেস ক্লাব